Backlink কি? ব্যাকলিংক কিভাবে কাজ করে ?
ব্যাকলিংক (Backlink) শব্দটি SEO দুনিয়ায় এমন এক শব্দ যা প্রত্যেক ডিজিটাল মার্কেটার, ব্লগার বা ওয়েবসাইট মালিকের মুখে মুখে। এটা এমন এক “ভোট অফ কনফিডেন্স” যা অন্য কোন ওয়েবসাইট থেকে আপনার ওয়েবসাইটের দিকে আসে। সহজভাবে বললে, যখন একটি ওয়েবসাইট আরেকটি ওয়েবসাইটের কোনও পেজের সাথে লিংক করে, তখন সেই লিংকটিই ব্যাকলিংক।
ব্যাকলিংকের কাজ অনেকটা বাস্তব জীবনের রেফারেন্সের মত। ধরুন আপনি একজন কফি এক্সপার্ট এবং আপনাকে নিয়ে কেউ ফেসবুকে বা ব্লগে বলছে— “এই লোকটা চমৎকার কফি বানাতে জানে।” ঠিক তেমনভাবেই গুগল ধরে নেয়, যদি অন্য ওয়েবসাইট আপনার ওয়েবসাইটের লিংক দেয়, তবে নিশ্চয়ই আপনার কনটেন্ট ভালো, নির্ভরযোগ্য এবং ইনফর্মেটিভ।
গুগলের অ্যালগোরিদম মূলত ব্যাকলিংককেই ধরে নেয় ওয়েবসাইটের অথরিটি যাচাইয়ের প্রধান উপাদান হিসেবে। অর্থাৎ, যত বেশি ভালো কোয়ালিটির ওয়েবসাইট আপনার পেজে লিংক করবে, তত বেশি গুগল আপনার কনটেন্টকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করবে।
ব্যাকলিংকের সংজ্ঞা – সহজভাবে বোঝা
ব্যাকলিংক আসলে কি বোঝায়?
প্রযুক্তিগতভাবে বললে, ব্যাকলিংক হচ্ছে এক ধরণের হাইপারলিংক যা একটি ওয়েবসাইট থেকে অন্য ওয়েবসাইটে নির্দেশ করে। এটি HTML কোডের মাধ্যমে তৈরি হয় এবং সাধারণত এর মধ্যে href অ্যাট্রিবিউট থাকে যা URL নির্দিষ্ট করে। উদাহরণস্বরূপ:
এই কোডে “banglaras.com” হলো টার্গেট ওয়েবসাইট এবং এই লিংকটি যেখানে বসানো হয়েছে, সেটাই ব্যাকলিংক দিচ্ছে।
তবে এখানে খেয়াল রাখতে হবে যে শুধু ব্যাকলিংক থাকলেই হবে না—ব্যাকলিংকটি অবশ্যই প্রাসঙ্গিক এবং অথরেটিভ সোর্স থেকে আসা জরুরি। নয়তো এটি SEO-তে কোনো ভালো ফল দেবে না, বরং খারাপ ফলও আনতে পারে।
লিংক বিল্ডিং বনাম ব্যাকলিংক – পার্থক্য কী?
অনেকেই ব্যাকলিংক এবং লিংক বিল্ডিংকে এক মনে করে বসেন। কিন্তু এই দুটো এক নয়। ব্যাকলিংক হলো ফলাফল, আর লিংক বিল্ডিং হলো সেই ফলাফল পাওয়ার কৌশল। মানে, আপনি যখন অন্য সাইট থেকে লিংক পাওয়ার জন্য চেষ্টা করেন, কনটেন্ট শেয়ার করেন, ইমেইল করেন, গেস্ট পোস্ট লেখেন—এগুলোকেই বলা হয় লিংক বিল্ডিং। আর যখন আপনি সফল হন এবং লিংক পান, তখন সেটা ব্যাকলিংক।
ব্যাকলিংকের প্রকারভেদ
Do-Follow ব্যাকলিংক
Do-Follow ব্যাকলিংক হলো এমন একটি লিংক যেটা গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনের বট/ক্রলার ফলো করে। এ ধরণের ব্যাকলিংক SEO-র জন্য সবচেয়ে কার্যকরী কারণ এটা ওয়েবসাইটের অথরিটি বৃদ্ধি করে এবং র্যাংকিংয়ে সরাসরি প্রভাব ফেলে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি banglaras.com থেকে আপনার ওয়েবসাইটে একটা Do-Follow লিংক আসে, তাহলে সেটা গুগলের চোখে অনেক মূল্যবান হবে।
No-Follow ব্যাকলিংক
No-Follow ব্যাকলিংক গুগলকে বলে দেয়: “এই লিংক ফলো করো না।” এই ধরণের লিংকগুলোর উপর গুগল বেশি গুরুত্ব দেয় না র্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে। তবে No-Follow লিংক থেকেও ট্র্যাফিক আসতে পারে, ব্র্যান্ড এক্সপোজার হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে ইনডিরেক্ট SEO বেনিফিট পাওয়া যায়।
Sponsored ও UGC ব্যাকলিংক
গুগল এখন নতুন দুই ধরনের ব্যাকলিংককে গুরুত্ব দেয়:
Sponsored: পেইড প্রমোশনের জন্য দেওয়া লিংক, যেমন—অ্যাফিলিয়েট লিংক বা স্পন্সরশিপের মাধ্যমে পাওয়া লিংক।
UGC (User Generated Content): ফোরাম, কমেন্ট, বা ইউজার দ্বারা তৈরি কনটেন্ট থেকে আসা লিংক।
এই ব্যাকলিংকগুলোকে সঠিকভাবে ট্যাগ না করলে গুগল পেনাল্টি দিতে পারে।
ব্যাকলিংক কিভাবে কাজ করে?
গুগলের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাকলিংকের কাজ
গুগলের অ্যালগোরিদম ব্যাকলিংককে ব্যবহার করে ওয়েবসাইটের মূল্যায়ন করতে। এটা ঠিক যেমন স্কুলে একজন ছাত্র কতজন শিক্ষক ও বন্ধুদের কাছ থেকে রেফারেন্স পাচ্ছে, তেমনি একটা ওয়েবসাইট কতজন অথরেটিভ ওয়েবসাইটের কাছ থেকে "সমর্থন" পাচ্ছে—সেটা ব্যাকলিংক দিয়েই বোঝা যায়।
গুগলের PageRank অ্যালগোরিদমের মূল ভিত্তিই হলো ব্যাকলিংক। যত বেশি অথরিটি ওয়েবসাইট থেকে ব্যাকলিংক পাওয়া যায়, তত বেশি গুগল বুঝতে পারে যে আপনার সাইট “বিশ্বস্ত” এবং “মূল্যবান”।
ব্যাকলিংকের মাধ্যমে ট্র্যাফিক আসা কি সম্ভব?
হ্যাঁ, ব্যাকলিংক শুধু র্যাংকিং বাড়ায় না, বরং ডাইরেক্ট ভিজিটরও আনতে পারে। ধরুন TechCrunch বা Medium-এর মত বড় সাইটে আপনার একটি গেস্ট পোস্ট আছে এবং সেখানে আপনার সাইটের লিংক আছে—তাহলে সেই লিংকের মাধ্যমে হাজার হাজার পাঠক আপনার সাইটে আসতে পারে।
তাই শুধু SEO নয়, ব্যাকলিংক মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজির একটি বড় অংশও বটে।
SEO-তে ব্যাকলিংকের গুরুত্ব
সার্চ ইঞ্জিন র্যাংকিং বাড়াতে ব্যাকলিংকের ভূমিকা
SEO-র মূল উদ্দেশ্য হলো সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংকিং বাড়ানো, আর ব্যাকলিংক তার অন্যতম হাতিয়ার। গুগল বা বিং-এর মত সার্চ ইঞ্জিন ব্যাকলিংক দিয়ে বোঝে কোন কনটেন্ট বেশি “trustworthy” এবং “useful”।
যত বেশি অথরেটিভ সাইট থেকে লিংক পাবেন, তত বেশি আপনার সাইটে “লিঙ্ক জুস” আসবে—যা গুগলের কাছে সিগন্যাল দেয় যে এই পেজটা র্যাংক করার যোগ্য।
ব্যাকলিংক কি শুধু র্যাংকিংয়ের জন্য?
না, ব্যাকলিংকের কাজ শুধু র্যাংকিং বাড়ানো নয়। ব্যাকলিংক:
ওয়েবসাইটের অথরিটি বাড়ায়
ট্রাফিক বাড়ায়
ব্র্যান্ড ভিজিবিলিটি বাড়ায়
আপনার কনটেন্টকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে
এছাড়া ব্যাকলিংক সোশ্যাল প্রুভের মত কাজ করে—যার ফলে মানুষ বিশ্বাস করে, “আরে, অন্য কেউ যখন এই সাইটকে রেফার করছে, নিশ্চয়ই ভালো কিছু আছে।
ব্যাকলিংক কিভাবে তৈরি করবেন? (প্র্যাকটিক্যাল গাইড)
গেস্ট পোস্টিং
গেস্ট পোস্টিং হল ব্যাকলিংক তৈরির সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কার্যকরী কৌশলগুলোর একটি। আপনি যখন কোনো জনপ্রিয় ওয়েবসাইটে একটি মানসম্মত আর্টিকেল লিখে দেন এবং সেই আর্টিকেলের ভিতরে নিজের ওয়েবসাইটের একটি লিংক দেন, তখন সেটিই হয়ে যায় একটি প্রাসঙ্গিক ও অথরেটিভ ব্যাকলিংক।
এই পদ্ধতির মাধ্যমে আপনি শুধু ব্যাকলিংকই পাচ্ছেন না, বরং সেই ওয়েবসাইটের পাঠকগোষ্ঠীর কাছেও আপনার ব্র্যান্ড এক্সপোজার হচ্ছে। গেস্ট পোস্টিংয়ের জন্য প্রথমে আপনার টার্গেট নিস (Niche) এর সাইটগুলো খুঁজে বের করতে হবে। এরপর সেইসব ওয়েবসাইটের কন্টাক্ট ফর্ম বা ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে গেস্ট পোস্ট অফার দিতে হবে।
একটা কথা মনে রাখবেন, গেস্ট পোস্ট মানেই স্প্যামি কনটেন্ট নয়। বরং, এমন কনটেন্ট দিন যা সত্যি সত্যি পাঠকদের উপকারে আসবে। তখনই সেই ব্যাকলিংক হবে গুগলের চোখে মূল্যবান।
কনটেন্ট মার্কেটিং এবং শেয়ারিং
কনটেন্টই এখনকার সময়ের রাজা। আপনি যত মানসম্পন্ন এবং ইনফরমেটিভ কনটেন্ট তৈরি করবেন, ততই সেটি মানুষ শেয়ার করবে, উল্লেখ করবে, এবং লিংক করবে। তাই ব্যাকলিংক পাওয়ার জন্য প্রথম শর্তই হল – ভালো কনটেন্ট।
ইনফোগ্রাফিক্স: সুন্দর ডিজাইনের ইনফোগ্রাফিক তৈরি করে তা বিভিন্ন ইনফোগ্রাফিক শেয়ারিং ওয়েবসাইটে জমা দিন।
ইন্টারভিউ কনটেন্ট: কোনো বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎকার নিয়ে তা প্রকাশ করলে, সে ব্যক্তিও সেটি শেয়ার করবে।
রিসার্চ বা কেস স্টাডি: ডেটা ভিত্তিক কনটেন্ট বেশি ব্যাকলিংক পায় কারণ মানুষ ফ্যাক্ট চায়।
আপনার কনটেন্ট যত শেয়ারযোগ্য হবে, তত বেশি ব্যাকলিংক আসবে।
হাই কোয়ালিটি ওয়েবসাইট থেকে লিংক পাওয়ার কৌশল
উচ্চ গুনগত মানের ওয়েবসাইট থেকে ব্যাকলিংক পাওয়া সহজ নয়, তবে অসম্ভবও নয়। নিচে কিছু কৌশল দেওয়া হলো:
ব্রোকেন লিংক বিল্ডিং: কোনো সাইটে ভাঙা বা কাজ না করা লিংক খুঁজে বের করে তাদের বলুন, “আপনি চাইলে আমার এই রিলেভেন্ট কনটেন্টটিকে রিপ্লেস করতে পারেন।” এতে তারা উপকারও পায় এবং আপনিও ব্যাকলিংক পান।
Skyscraper Technique: কোনো জনপ্রিয় কনটেন্ট খুঁজে বের করে তার চেয়েও ভালো কিছু তৈরি করুন, তারপর যেসব ওয়েবসাইট ওই পুরোনো কনটেন্টে লিংক দিয়েছে, তাদের বলুন আপনার কনটেন্টটিতে লিংক দিতে।
Mention but No Link: অনেক সময় অন্যরা আপনার ব্র্যান্ড বা নাম উল্লেখ করে কিন্তু লিংক দেয় না। তাদেরকে অনুরোধ করুন যাতে তারা লিংক করে।
ব্যাকলিংক বিশ্লেষণের সেরা টুলস
Ahrefs
Ahrefs হলো একটি শক্তিশালী SEO টুলস যেটি মূলত ব্যাকলিংক বিশ্লেষণ করার জন্য বিখ্যাত। এই টুল দিয়ে আপনি:
আপনার ওয়েবসাইটে কতগুলো ব্যাকলিংক আছে তা জানতে পারবেন
কোন ওয়েবসাইট থেকে ব্যাকলিংক এসেছে
সেই লিংকগুলো Do-Follow নাকি No-Follow
প্রতিটি ব্যাকলিংকের ডোমেইন অথরিটি কত
Ahrefs এর ব্যবহার সহজ, ডেটা একুরেট এবং রিপোর্ট বিশ্লেষণ সুবিধাজনক। যেকোনো বড় ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি এই টুলটি ব্যবহার করে থাকে।
SEMrush
SEMrush শুধু ব্যাকলিংক নয়, পুরো ওয়েবসাইটের SEO অডিট করতে পারে। এটি দিয়ে আপনি দেখতে পারবেন:
আপনার কম্পিটিটর কারা?
তাদের কীওয়ার্ড কী?
কোথা থেকে তারা ব্যাকলিংক পাচ্ছে?
এছাড়া SEMrush-এর ব্যাকলিংক অডিট ফিচার খুবই কার্যকরী। এটি আপনাকে “টক্সিক ব্যাকলিংক” শনাক্ত করতে সাহায্য করে যাতে গুগল Penalty না দেয়।
Moz ও Ubersuggest
Moz ব্যাকলিংক বিশ্লেষণের জন্য খুবই জনপ্রিয় একটি টুল, বিশেষ করে যারা বিগিনার লেভেলে আছেন। এর DA (Domain Authority) এবং PA (Page Authority) স্কোর SEO এনালাইসিসে অনেক কাজে আসে।
Ubersuggest হলো নিল প্যাটেলের তৈরি ফ্রি SEO টুল। এর মাধ্যমে আপনি ব্যাকলিংক রিপোর্ট ছাড়াও কীওয়ার্ড রিসার্চ, ট্রাফিক এনালাইসিস করতে পারবেন।
এইসব টুল ব্যবহার করে আপনি নিজের ওয়েবসাইট বা কম্পিটিটরের ব্যাকলিংক স্ট্র্যাটেজি ভালোভাবে বুঝে নিতে পারবেন।
উপসংহার
SEO শেখার পথে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত অথচ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো ব্যাকলিংক। আপনি যত ভালো কনটেন্টই লিখুন না কেন, যদি সেই কনটেন্ট কেউ না দেখে, না পড়ে বা গুগলে না পায়—তাহলে তার কোনো মূল্য নেই। ব্যাকলিংকই সেই পথ, যেটা আপনার কনটেন্টকে লক্ষ লক্ষ মানুষের সামনে তুলে ধরতে সাহায্য করে।
আজকের যুগে শুধু লিংক তৈরির জন্য ব্যাকলিংক করলেই হবে না। বরং আপনাকে জানতে হবে কোথা থেকে লিংক নিচ্ছেন, কেন নিচ্ছেন, এবং সেটি আদৌ প্রাসঙ্গিক কিনা। SEO-তে লম্বা সময় টিকে থাকতে হলে আপনাকে বুঝে-শুনে অথরিটেটিভ, রিলেভেন্ট এবং হেল্পফুল ব্যাকলিংক তৈরি করতে হবে।